ঢাকা , সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিনেমার পর্দায় আবরার হত্যাকাণ্ড দেখে কাতর দর্শকরা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১১-০১-২০২৫ ১২:০৭:৩১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১১-০১-২০২৫ ১২:০৭:৩১ অপরাহ্ন
সিনেমার পর্দায় আবরার হত্যাকাণ্ড দেখে কাতর দর্শকরা সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
যশোরে প্রদর্শিত হয়েছে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ওপর নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘রুম নম্বর ২০১১’। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দেশের সর্ববৃহৎ সিনেমা হল মণিহার সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটি দেখানো হয়। জেলা প্রশাসক, বৈষমবিরোধী ছাত্র নেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সিনেমার দৃশ্য দেখে বেদনায় কাতর হন।

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। সেই ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রুম নম্বর ২০১১’।চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ জিসান আহমেদ এবং চিত্রনাট্য রচনা করেছেন একই বিভাগের অধ্যাপক আনন জামান।সিনেমাটিতে অভিনয় করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।এ সিনেমার নির্মম দৃশ্য দেখে বেদনায় কাতর হয়েছে হলে থাকা দর্শকরা। ভবিষৎ প্রজন্মকে সচেতন করতে এ ধরণের সিনেমা আরোও নির্মাণের তাগিদ দিয়েছেন তারা।

যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ মানস বিশ্বাস বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছি। আবরার হত্যাকাণ্ড সবশ্রেণির মানুষের মাঝে নাড়া দিয়েছিল। কিছু লোক প্রতিবাদ করলেও অনেকেই করতে পারেনি নানা কারণে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাকে নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী সিনেমা তৈরি করেছে। গল্পটি হৃদয়বিদারক। এরকম নির্যাতন বা মৃত্যু নিয়ে যতঘটনা আছে; সেগুলো নিয়ে সিনেমা তৈরি করা উচিত।’

যশোরের কবি মামুন আজাদ বলেন, এ ধরনের সিনেমা জাতিকে যে কোনো অন্যায়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা দেয়। কতটা নির্মম ছিল সেদিনের ঘটনা তা পর্দায় দেখে শিহরিত হয়েছি। চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে। ঘৃণিত এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাই।সিনেমা নির্মাণের সাথে জড়িত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজন্যা জানান, এই সিনেমা কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়। এটি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প; আমাদের গল্প। এমন বাস্তবভিত্তিক মৌলিক কাজের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত ও আনন্দিত।

সিনেমাটির পরিচালক শেখ জিসান আহমেদ বলেন,  ‘রুম নম্বর ২০১১’ সরাসরি বায়োপিক নয়। আবরারের ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। আমরা নির্মাণের আগে তার পরিবার, বন্ধু, স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। আবরার সম্পর্কে সবকিছু জেনেই নির্মাণে হাত দিয়েছি। তবে আবরারের ঘটনাটি বুয়েটের হলেও এটির শুটিং হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।’তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে সিনেমাটি নির্মিত করতে যেয়ে বাধার শিকার হয়েছি। পরে পটপরিবর্তনের পর কাজ শেষ করেছি। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বলি হয়ে আর যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয় এটাই কাম্য আমাদের। বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’এদিকে প্রথম দিনের চারটি শোতেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।

সিনেমা হলটির ব্যবস্থাপক ও হিসাবরক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন জানান, ‘এটা আসলে সিনেমা নয়; বাস্তব ঘটে যাওয়া বেদনা দায়ক গল্প। সেটা ফুটিয়ে তুলেছে কিছু শিক্ষার্থীরা। এই ধরনের সিনেমা আরো তৈরি হওয়া উচিত।সিনেমা প্রদর্শন শেষে যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আবরারের সিনেমাটি মূলত বিগত সময়ে বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র। শুধু শিক্ষার্থী নয় সারাদেশে একটি ভীতিকর পরিবেশ ছিল। বিগত সময়ে তারাই চাকরি পেতো; যাদের তাদের চেতনা লালন করতো। ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি আরও বলেন,  আমরা দুটি বার্তা দিতে চাই। আবরারে মতো ঘটনা দেশে আর দ্বিতীয়টি না ঘটুক। আবরারদের মৃত্যুর চেতনা নিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম আত্মমর্যাদা নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ